ছড় ছড়, ছড় ছড়, ছড় ছড়… ছড়াৎ ছরাৎ, ছড়াৎ ছরাৎ, ছড়াৎ ছরাৎ, ছড়াৎ ছরাৎ ... বালতি উপচে পড়ে যাচ্ছে পানি। ইদানীং পানির বড় কষ্ট, মা খালারা যখন তখন এঁটো থালাবাসনের ডাঁই সামনে জমিয়ে রেখে কপাল চাপড়ান।
বাড়ীওয়ালা লোকটা কিন্তু খারাপনা, বরং প্রানে বেশ দয়ামায়া আছে। তবে চাইলেও লোকটা কিছু করতে পারছেনা। লোকটারই বা কি দোষ। দেশের তাবৎ মন্ত্রী মিনিস্টার আর নগর পিতারা মিলে যেখানে ফেল মেরেছেন, সেখানে একে বকাঝকা করে কি ফায়দা!
প্রতি ফোঁটা পানি এখানে মহামুল্যবান। আমি কম্পিউটারে টাইমারটা বন্ধ করে উঠে দাড়াই।
- কই যাচ্ছিসরে জব্বার?
আমি কাচুমচু হয়ে বড়ভাইটার মুখের দিকে তাকাই। বড়ভাইটা একটু জ্ঞানী প্রকৃতির, পত্রিকায় সিরিয়াস ধরণের সব ফিচার লেখে, সেমিনারে বক্তৃতা- ফক্ত্রিতা ও দেয়। আজকাল আবার টিভির লেট নাইট টক শোগুলোতে ও কথা বলা শুরু করেছে।
টিভিতে কথা বলেন- ভালো কথা। দেশের উপকার, পরিবারের ও সুনাম। সমস্যা হচ্ছে রাত বিরাতে কাঁচা ঘুম থেকে উঠে গেট খোলার কাজটা যে আমাকেই করতে হচ্ছে।
যা হোক, বড়ভাইকে একটু ভয় ই পাই। মাথায় কত জ্ঞান বিজ্ঞান ঘিচঘিচ করছে। কথায় বলেনা- অজ্ঞানের (!) চাবুকের চেয়ে জ্ঞানী লোকের কথার মারে ব্যথা বেশি।
এমন জ্ঞানী বড়ভাইয়ের সামনে কথাবার্তা সাবধানে বলাই ভালো। আমি কাচুমচু হয়ে বিনয়ের কারনে একপ্রকার ঝুঁকে পড়েই জবাব দেই।
- ইয়ে! পানি পড়ে যাচ্ছে যে দাদা!
- হুম! পানি পড়ে যাচ্ছে, সে এক ভীষণ সমস্যাই বটে! এভাবে যদি ঢাকা সিটিতে প্রতি ফ্যামিলি ডেইলি দুই বালতি করে পানি ওয়েস্ট করে তাহলে মান্থলি ওয়েস্টেজের পরিমাণটা কত হবে ভেবেছিস? আচ্ছা যা, ডেইলি বেসিসেই হিসেবটা কর।
জীবনে কখনো অঙ্কে চল্লিশের উপর পাইনি। জ্বর হলে সবসময় ঘোরের মাঝে শুধু বানরই দেখেছি। বুড়ো-ডাগর, নারী-পুরুষ, ভদ্র-অসভ্য ধরণের অসংখ্য বানর। তাদের হাতে তেল মাখানো অজস্র কচি বাঁশ।
স্পারটান যোদ্ধার মত হাতে বাঁশ নিয়ে ওরা সবাই তেড়ে আসছে।
আমার প্রতি হয়তো ওদের সহানুভূতিই ছিল। তবে জ্বরের ঘোরে আমার সবসময় মনে হত অতগুলো বাঁশের আগা ওরা বোধহয় আমার কথা ভেবেই ছুঁচলো করে চেঁছে নিয়েছিল।
বড়ভাই ও বোধহয় আমার বাঁশ তথা অঙ্কভীতির কথা জানেন। ছোটকালে একারনে হালকা মারধরও করেছেন, তবে এখন এ ব্যাপারে আমার প্রতি তার একটা সহানুভুতির ভাব আছে- এ আমি বেশ বুঝতে পারি।
- আচ্ছা যা, টেপটা বন্ধ করে আয়। কিন্তু এখানে টেপ বন্ধ করে ফায়দা কি? মূল জায়গাতেই যে আমাদের ফুটো হয়ে গেছে, সব পানিতো সে ফুটো দিয়ে দেদারছে বের হয়ে যাচ্ছে- সেটা বন্ধ করবি কিভাবে?
আমি এবার পুরোপুরিই বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। মূল জায়গা! মানে মেইন লাইন ফেটে গেল নাকি আবার! কই! কোন শোরগোল তো শুনতে পেলামনা। উৎসুক হয়ে বারান্দা দিয়ে উঁকি মারতে যেতেই বড়ভাই হা হা করে উঠলেন।
- আহারে, পোলাটা আর চালাক চতুর হইলিনা! মূল জায়গা বলতে আমি নিচের মেইন লাইন বুঝাই নাই, অন্য কিছু বুঝাইছি। তোরা তো পড়াশোনা কিছু করছনা, জ্ঞানের কোন চর্চা নেই। তুই এক কাজ কর- ঢাকা শহরে এই পানির সংকটের উপর একটা রিপোর্ট লিখে ফেল, সুযোগ পেলে আমি পত্রিকায় ছাপায়ে দিবো।
এইরে সেরেছে, রিপোর্ট লিখতে হবে! তাতে নিশ্চয়ই পানি অপচয়ের হিসেব সংক্রান্ত যত অংক কষতে হবে! নরমাল ক্যালকুলেটরে তো আঁটবেনা, সায়েন্টিফিকটা এখন কই পাই!
- ইয়ে দাদা, রিপোর্টটা এখনই লিখবো? নাকি পানিটা বন্ধ করে তারপর ...
- আরে গাধা, আগে পানি বন্ধ কর, তারপর লিখতে বস!
তড়িঘড়ি করে বাথরুমে ঢুকে দেখি পানি পড়া এমনিতেই থেমে গেছে। যাবেইতো, বাড়ীওয়ালা একবার পানি ছাড়লে সবাই যেভাবে হামলে পড়ে!
আম্মা গেছেন নিউমার্কেটে। যাবার আগে বারবার বলে গিয়েছিলেন যাতে পানি আসলে নীল ড্রামটা ভরিয়ে রাখি।
পানির অভাবে গত তিন চারদিন ধরে ঘর মোছা- কাপর ধোয়া হচ্ছেনা। রান্নাঘরের জানালার গ্রিলে আম্মার ঘর মোছার ত্যানাটা শুটকি মাছের মত লটকে আছে। আজকে আম্মা ঘরে ফিরলে কি হাউকাউটা হবে- সেটা ভেবেই আমার অল্পস্বল্প ঘাম হতে লাগলো।
আম্মার বকাঝকার ভয়েই কিনা, মাথাটা একটু ঘুরে গেল। ঝিমঝিম অনুভূতির মধ্যে যেন উল্টাপাল্টা দেখা শুরু করলাম।
বাথরুমে পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেছে, বহুক্ষণ হল। তবু ছড়াৎ ছড়াৎ শব্দটা যেন শুনতে পাচ্ছি যেন। বাথরুমে আবার ঢুকে দেখি- নাহ! ট্যাপ থেকে তো পানি পড়ছেনা!
বাথরুম হতে বের হতেই মনে হল সবকিছু দুলছে, ভুমিকম্প হচ্ছে নাকি বাবা!
রান্নাঘরে ডাই করা বাসনগুলো কাঁপছে ঝনঝন। তার উপর লটকে থাকা ত্যানাটাও দুলছে অল্পস্বল্প।
আমি হাত বাড়িয়ে বাথরুমের দেয়ালটা ধরে নিজেকে কোনমতে সামলাতেই দেখলাম রান্নাঘরে ত্যানাটার বিভাজন হল, অনেকটা এমিবার মত করেই ...
ক্রমশ একটা ত্যানা থেকে দুটো, দুটো থেকে চারটে তারপর অসংখ্য অজস্র ত্যানায় ভরে যেতে লাগলো আমার চারপাশ।
বড়ভাইটার কোনদিকে হুশ নেই। নিবিষ্টমনে সে দিস্তা কাগজে কি যেন লিখে যাচ্ছে, পছন্দসই না হলে ছুড়ে ফেলছে ওয়েস্ট বাস্কেটে।
সেদিকে তাকিয়ে দেখি বড় ভাইয়ের ফেলে দেয়া দোমড়ানো কাগজগুলোও পরিনত হয়েছে ত্যানায়। অতঃপর প্যাঁচানো ত্যানাগুলো আবার বিভাজন শুরু করলো। একটা থেকে দুটো, দুই থেকে চার... আমি দুহাতে চোখ ঢেকে ফেললাম, বড়ভাই বোধহয় কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে ঝড়ের গতিতে বের হয়ে এলাম ঘর থেকে।
গতকাল রাতে রতনদের সাথে চিপায় গিয়ে সাল্টুতে টান দিয়েছিলাম, একটু মনে হয় বেশীই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। নাহ! এসব ছাইপাঁশ খাওয়া ছাড়তে হবে। রতনগুলার সাথেও আর মেশা যাবেনা।
কাজকাম না থাকলে এমনই হয়। বড়ভাইরে ধরে একটা কোথাও ঢুকে যেতে হবে। এমন জ্ঞানী বড়ভাই আমার, কোথাও না কোথাও একটা সিস্টেম ঠিকই করে ফেলবেন ...
০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪